রান্নাঘরে রাতের খাবারের প্রস্তুতির সময় যদি আলুর ঝুড়িতে তাকিয়ে দেখেন-আলুতে সবুজ রঙের দাগ, ছোট ছোট শেকড়ের মতো অঙ্কুর বের হয়েছে, তখন দ্বিধা স্বাভাবিক। প্রশ্ন জাগে-এগুলো কি এখনো খাওয়া যাবে, নাকি সরাসরি ময়লার ঝুড়িতে স্থানান্তর করা উচিত?
অঙ্কুরিত হওয়া-প্রাকৃতিক কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ
আলু মূলত একটি সঞ্চিত খাদ্যভান্ডার। সঠিক পরিবেশ-অল্প আলো, উষ্ণ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা-পেলে এটি থেকে নতুন গাছ জন্মানোর চেষ্টা শুরু হয়। সেই প্রচেষ্টার প্রথম ধাপই হলো অঙ্কুর বের হওয়া।
এই সময় আলুর ভেতরে তৈরি হয় গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড নামের প্রাকৃতিক বিষাক্ত যৌগ। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো সোলানাইন। এটি আলুকে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে, কিন্তু মানুষের জন্য বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর।
কখন আলু খাওয়া বিপজ্জনক?
সবুজ দাগ বা ত্বক: সবুজ অংশে সোলানাইনের মাত্রা বেশি থাকে।
দীর্ঘ অঙ্কুর: বেশি দিন ধরে অঙ্কুরিত থাকা আলুতে বিষাক্ত উপাদান জমে যায়।
তিতা স্বাদ: রান্নার পর তিতা বা কষা স্বাদ থাকলে তা না খাওয়াই ভালো।
নরম ও কুঁচকে যাওয়া: শুষ্ক ও নরম আলু পুষ্টিগুণ হারিয়েছে, পাশাপাশি টক্সিন বেড়েছে।
খাওয়ার আগে করণীয়
অল্প অঙ্কুর হলে, তা ও আশেপাশের অংশ ছেঁটে ফেলুন।
সবুজ দাগ থাকলে গভীরভাবে কেটে বাদ দিন।
ভালো করে ধুয়ে রান্না করুন, তবে ঝুঁকি পুরোপুরি দূর হয় না।
শিশু, গর্ভবতী নারী বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষকে অঙ্কুরিত আলু না দেওয়াই নিরাপদ।
প্রতিরোধের উপায়
আলু ঠান্ডা, শুকনো ও অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করুন।
ফ্রিজে রাখবেন না, কারণ ঠান্ডা তাপমাত্রা থেকেও শর্করা ভেঙে সোলানাইন বাড়তে পারে।
পেঁয়াজের সঙ্গে একসাথে রাখবেন না-পেঁয়াজ থেকে নির্গত গ্যাস অঙ্কুরোদগম বাড়িয়ে দেয়।
শেষকথা –
অঙ্কুরিত আলু সবসময় ফেলে দিতে হবে এমন নয়, তবে সতর্কতা জরুরি। অল্প অঙ্কুর ও কোনো সবুজ দাগ না থাকলে ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া যায়। কিন্তু বেশি সবুজ, দীর্ঘ অঙ্কুর বা নরম আলু ঝুঁকিপূর্ণ-এগুলো সরাসরি বিদায় দিন।