এইমাত্র

আরও খবর

blog-02Aug-02
সূর্যের আলো কি সত্যিই ক্ষতিকর, নাকি আশীর্বাদ?

পরচর্চা: পাপ, প্রবণতা না প্রাকৃতিক প্রবাহ?

আমরা এমন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি, যেটা শুনলেই অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আবার কেউ কেউ আগ্রহ নিয়ে কান পেতে থাকেন।এই বিষয়টি হতে পারে কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আড়ালে চর্চা, হতে পারে অফিসের সহকর্মীকে নিয়ে ঠাট্টা, কিংবা পাড়ার চায়ের দোকানে কার বউ কোথায় গেল-তা নিয়ে বিশ্লেষণ।হ্যাঁ, বলছি সেই চিরচেনা “গসিপ” বা “পরচর্চা” নিয়ে।

 

পরচর্চা আসলে কী?

গসিপ বা পরচর্চা হচ্ছে এমন একটি সামাজিক আচরণ, যেখানে সাধারণত এক বা একাধিক ব্যক্তি অন্য কারো অনুপস্থিতিতে তার ব্যক্তি-জীবন, সিদ্ধান্ত, চরিত্র বা কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা করে। এটি হতে পারে:

  • মজার বা বিনোদনমূলক
  • সমালোচনামূলক বা নেতিবাচক
  • তথ্যভিত্তিক বা গুজবপূর্ণ
  • সহানুভূতিমূলক বা উদ্দেশ্যহীন

 

নৃবিজ্ঞান কী বলে?

নৃবিজ্ঞানীদের মতে, গসিপ কোনো একক জাতি, শ্রেণি বা সংস্কৃতির বিষয় নয়। এটি পৃথিবীর প্রায় সব সংস্কৃতিতেই বিদ্যমান। মানুষ যেখানেই ছোট একটি সমাজ গড়ে তুলেছে, সেখানেই পরচর্চার বীজও গেঁথে গেছে।গসিপ মানুষের মাঝে তথ্য বিনিময়ের একটি আদিম রূপ হিসেবেও বিবেচিত। সমাজে কে বিশ্বাসযোগ্য, কে বিশ্বাসঘাতক, কে নিয়ম ভাঙছে-এসব তথ্য পরোক্ষভাবে ছড়িয়ে দেয় এই গসিপই।

 

গসিপের ইতিবাচক দিক

হ্যাঁ, অবাক হলেও সত্যি-গসিপের কিছু ইতিবাচক দিকও আছে:

 

সম্পর্ক গড়ে তোলে: সাধারণত গসিপ শুরু হয় ঘনিষ্ঠতা তৈরির একটা হাতিয়ার হিসেবে। “তুমি জানো? কালকে কী হয়েছে?”এই প্রশ্ন থেকেই বন্ধুত্ব জন্ম নেয়।

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: সমাজে অগ্রহণযোগ্য বা অনৈতিক আচরণ সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে সমাজ কোনো ব্যক্তি বা ঘটনার ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

তথ্য বিনিময়: গসিপ অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ অপ্রকাশিত তথ্য ছড়িয়ে দেয়, যা মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

গসিপের নেতিবাচক দিক

তবে, গসিপ যতটা সহজ আর নিরীহ মনে হয়, এর ফলাফল ততটাই গুরুতর হতে পারে:

 

মানসিক আঘাত: ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য কারো সম্মান ক্ষুণ্ন করতে পারে। আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে একজন ব্যক্তি।

সম্পর্ক নষ্ট: বিশ্বাসভঙ্গ ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।

কর্মক্ষেত্রে বিভ্রান্তি: অফিস পলিটিক্সের বড় একটা অংশ গসিপ ঘিরেই।

তাহলে, গসিপ কি করবেন না?

এখানে এসে প্রশ্ন ওঠে-গসিপ কি একেবারেই বন্ধ করা উচিত?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “না, গসিপ বন্ধ করার দরকার নেই-বরং সচেতন হতে হবে কী নিয়ে ও কীভাবে বলছি সেটা নিয়ে।”

ব্যক্তিগত তথ্য, অপমানমূলক ভাষা বা মিথ্যা তথ্য এড়িয়ে গসিপকে যদি শুধু সামাজিক কথাবার্তার অংশ করা যায়, তবে সেটা একধরনের “সোশ্যাল বন্ডিং” হিসেবেও কাজ করে।

শেষকথা:

গসিপ আমাদের সমাজ ও আচরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা একদিকে যেমন রসদ দেয় বিনোদনের, অন্যদিকে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে সম্পর্ক ও সম্মানে।

সর্বাধিক পঠিত