মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।গর্ভাবস্থা নারীর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সময়। এই সময় মায়ের শরীরে নানা শারীরিক ও হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে। এর প্রভাব সরাসরি গর্ভস্থ শিশুর ওপরও পড়ে। তাই এ সময় রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম হলে মা ও শিশুর উভয়েরই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
স্বাভাবিক রক্তচাপ কত হওয়া উচিত?
গর্ভাবস্থায় রক্তচাপের আদর্শ মাত্রা হলো:
- সিস্টোলিক (উপরের চাপ): ১১০–১২০ mmHg
- ডায়াস্টোলিক (নিচের চাপ): ৭০–৮০ mmHg
এই মাত্রার ভেতরে থাকলে রক্তচাপকে স্বাভাবিক (Normal) হিসেবে ধরা হয়। তবে সামান্য তারতম্য অনেক সময় গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ধরা যেতে পারে, বিশেষত প্রথম তিন মাসে।
কখন রক্তচাপ নিয়ে উদ্বেগ করা উচিত?
উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার / Hypertension):
- সিস্টোলিক ≥ ১৪০ mmHg অথবা
- ডায়াস্টোলিক ≥ ৯০ mmHg
এমন রক্তচাপ ধরা পড়লে তাকে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। এতে জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন:
- প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া (Pre-eclampsia): উচ্চ রক্তচাপ, মূত্রে প্রোটিন এবং অঙ্গ-অবসানের ঝুঁকি।
- গর্ভকালীন খিঁচুনি (Eclampsia): মারাত্মক অবস্থা যা মা ও শিশুর প্রাণনাশের কারণ হতে পারে।
- গর্ভকালীন শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া (IUGR)
নিম্ন রক্তচাপ (লো ব্লাড প্রেসার / Hypotension):
- সিস্টোলিক ≤ ৯০ mmHg অথবা
- ডায়াস্টোলিক ≤ ৬০ mmHg
লো প্রেসার থাকলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বমি ভাব, ঝিমুনি, এমনকি অচেতন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা করবেন:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
- লবণ ও পানি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ করান
- চা-কফি বা ক্যাফেইনজাতীয় খাবার কম খান
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না
- প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি থাকলে ওজন, প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিয়মিত মনিটর করুন
কবে ডাক্তার দেখানো জরুরি?
- হঠাৎ মাথাব্যথা শুরু হলে
- চোখ ঝাপসা দেখলে
- পেটের উপরিভাগে ব্যথা অনুভব করলে
- হাত-পা বা মুখ ফুলে গেলে
- প্রস্রাবে কম পরিমাণে বা ফেনাযুক্ত মূত্র হলে
- শিশুর নড়াচড়া কমে গেলে
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।