বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জুলাই মাস এখন শুধুই একটি ক্যালেন্ডারের অংশ নয়-এটা এক বিদ্রোহের নাম, পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি।
যেখানে শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন দিয়ে, সেখানে শেষটা হয়েছিল এক রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে-যার পরিণতিতে পতন ঘটে শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের।
কোটাবিরোধী দাবিতে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়
জুলাইয়ের শুরুর দিক থেকেই দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্রদের মুখে একটিই স্লোগান”কোটা সংস্কার চাই”।
চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, জেলা কোটা, নারী কোটা ইত্যাদি সংস্কারের দাবি নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে বিষয়টিকে অবহেলা করা হয়।
দমন-পীড়ন আর ক্ষোভের বিস্ফোরণ
- আন্দোলন দমনে নামিয়ে আনা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
- রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ-সবকিছুই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
- এখনো মনে আছে সেই দিনগুলোর ছবি-হাতভাঙা এক ছাত্রী চিৎকার করে বলছে: “আমি তো শুধু প্রশ্ন করেছিলাম!”
সাধারণ মানুষের যোগদান, আন্দোলনের রূপান্তর
শুধু ছাত্ররা নয়, সাধারণ জনগণ, চাকরিপ্রার্থীরা, এমনকি কিছু প্রবাসীও একাত্মতা প্রকাশ করে।
যার ফলে আন্দোলন আর কেবল কোটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না-এটি হয়ে ওঠে সামগ্রিক দুর্নীতির, দুঃশাসনের, দমননীতির বিরুদ্ধে এক গণ-আন্দোলন।ঢাকার রাজপথে লক্ষ জনতার ঢল, হাতে হাত ধরে গড়া মানববন্ধন আর সোচ্চার কণ্ঠে ধ্বনিত প্রতিবাদ-সব মিলিয়ে যেন এক গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি।
সরকার পতনের দিন
- ২৩ জুলাই, বিকেল ৪টা।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন। তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার হয় টেলিভিশনে।
- জনগণের এক অনড় ঐক্য এবং ছাত্রদের সাহসিকতার কাছে নতিস্বীকার করেন দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসক।
শেষকথা:
জুলাই ২০২৪ আমাদের দেখিয়েছে-প্রশ্ন করতে শিখলে, একসাথে দাঁড়াতে পারলে, পরিবর্তন আসবেই।ছাত্রদের হাত ধরে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা শেষ হয়েছিল এক নতুন ইতিহাসের সূচনায়।রক্তাক্ত হলেও, এই জুলাই মুক্তির প্রতীক।