বিয়ে মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যে ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও আস্থার বন্ধন তৈরি হয় বিয়ের মাধ্যমে। তবে সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং বাস্তবতা, পরিপক্বতা ও সামঞ্জস্য বিবেচনা করাও জরুরি। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য।
ইসলামে বয়সের পার্থক্যের উদাহরণ
ইসলাম বয়সের ব্যবধান নিয়ে কঠোর কোনো নিয়ম দেয়নি। বরং এখানে দেখা যায় বাস্তব উদাহরণ:
প্রিয় নবীজি (ﷺ)-এর নাতি ইমাম হুসাইন (রা.)-এর স্ত্রী আতিকা বিনতে যায়িদ (রা.) ছিলেন তার চেয়ে প্রায় ২৬ বছরের বড়ো।
জায়িদ ইবনে হারিসা (রা.)-এর স্ত্রী উম্মে আইমান (রা.) ছিলেন তার চেয়ে প্রায় ২০ বছরের বড়ো।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) যখন ৫৫ বছর বয়সে ছিলেন, তখন তিনি বিয়ে করেন হজরত আলি (রা.)-এর মেয়ে উম্মে কুলসুম বিনতে আলি (রহ.)-কে, যার বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। অর্থাৎ তাদের বয়সের পার্থক্য ছিল ৪৪ বছর।
এসব বাস্তব ঘটনা প্রমাণ করে যে, ইসলামে বয়সের পার্থক্য কোনো বাধা নয়; বরং ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক সামঞ্জস্যকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
কুরআনের দিকনির্দেশনা
পবিত্র কুরআনে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য নিয়ে সরাসরি কোনো বিধান নেই। তবে ইঙ্গিত পাওয়া যায় জান্নাতের জীবন সম্পর্কে:
وَ عِنۡدَهُمۡ قٰصِرٰتُ الطَّرۡفِ اَتۡرَابٌ
“(জান্নাতে) তাদের পাশে থাকবে সমবয়সী আয়তনয়না (জান্নাতি রমণী)।”
(সুরা সাদ, আয়াত: ৫২)
এ আয়াতে বোঝা যায়, সমবয়সী দম্পতি দাম্পত্য জীবনে বেশি ভারসাম্যপূর্ণ হয়।
বয়সের পার্থক্যের প্রভাব
বয়সের পার্থক্য অল্প হলে স্বামী-স্ত্রী সহজে মানসিকভাবে একে অপরকে বুঝতে পারেন।
বড়ো ব্যবধান থাকলে জীবনের অভিজ্ঞতা, মানসিকতা ও শারীরিক চাহিদায় ভিন্নতা আসতে পারে।
তবে অনেক ক্ষেত্রেই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ধৈর্য ও ভালোবাসা থাকলে বয়সের পার্থক্য সুখী দাম্পত্যে কোনো বাধা হয় না।
ইসলামের শিক্ষা কী?
ইসলাম বয়সের পার্থক্যের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে-
ধর্মীয় বিশ্বাসে সামঞ্জস্য
নৈতিক চরিত্র
আচরণ ও দায়িত্বশীলতা
সন্তান লালন-পালনের সক্ষমতা
অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান নিয়ে ইসলামে কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। বিয়ে সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করে পারস্পরিক বোঝাপড়া, ভালোবাসা, সহনশীলতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর।
শেষকথা –
স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য ইসলামে কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত আছে যেখানে স্বামী ছোটো, আবার কোথাও স্ত্রী ছোটো। তবে সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বয়সের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আদর্শ, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ ও আখলাক।